LOADING

Type to search

ঝিকরগাছার প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কপোতাক্ষ নদ থেকে বালু উত্তোলন

ঝিকরগাছা

ঝিকরগাছার প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কপোতাক্ষ নদ থেকে বালু উত্তোলন

Share

আফজাল হোসেন চাঁদ, ঝিকরগাছা :

উপজেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যশোরের ঝিকরগাছার কপোতাক্ষ নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে মাগুরা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জামাল হোসেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে। মাঝে মাঝে দু’একটা মোবাইল কোর্ট বসিয়ে বালু তোলা শ্যালো মেশিন আর বালু জব্দ করা হলেও কোনো ভাবেই এই বালু উত্তোলন ও বিক্রয় কার্যক্রম প্রতিহত করা সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিধ্বস সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞগনেরা। অভিযোগ পাওয়া যায় জব্দকৃত মালামাল আর বালু টেন্ডারের মাধ্যমে একেবারে পানির দামে আবারও সেই বালু উত্তোলনকারী বা তাদের প্রতিনিধিদের নিকট বিক্রয় করে দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ২নং মাগুরা ইউনিয়নের মাগুরা, ৪নং গদখালী ইউনিয়নের বারবাকপুর, ৬নং সদর ইউনিয়নের হাড়িয়াদেয়াড়া, মিশ্রিদেয়াড়া গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে কপোতাক্ষ নদের মাঝখানে বড় বড় শ্যালো মেশিন বসিয়ে পাইপ দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কোথাও সেই বালু দিয়ে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে আবার কোথাও বিক্রির জন্য বালুর স্তুপ তৈরি করে মজুদ করে রাখা হচ্ছে।
সদর ইউনিয়নের হাড়িয়াদেয়াড়া গ্রামের তেতুলতলা ও সালাফি মসজিদ সংলগ্ন দু’টি পুকুর অবৈধ ভাবে বালি তুলে ভরাট করা হয়েছে। নদ খনন কাজের দোহাই দিয়ে স্থানীয় কিছু দূর্বৃত্তদের সহায়তায় ঠিকাদার বা সাব ঠিকাদার এর প্রতিনিধিরা বালি উত্তোলন করছে। অনেক স্থানে এই কর্মকান্ডে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত থাকার কথা শোনা যাচ্ছে। মাগুরা ইউনিয়নের ফুলতলা ব্রীজের নীচে কপোতাক্ষ নদ খননের কাজ পাওয়া ঠিকাদার শহীদ কপোতাক্ষ নদের মাঝে শ্যালো মেশিনের ইঞ্জিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। বারবাকপুর, হাড়িয়াদেয়াড়া অংশে সাব ঠিকাদার আওয়ালের সাথে যোগসাজশে বিভিন্ন পুকুর, জলাশয়, ডোবা ভরাট কার্যক্রম চলছে। এছাড়াও মিশ্রীদেয়াড়া বাজার মসজিদের নীচে দু’টি শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য জামাল হোসেন অভিনব কায়দায় মসজিদের ফ্রি বালু দেওয়ার কথা বলে অবৈধ বালু উত্তোলন করছে। বালু তুলে সংরক্ষণের জন্য নদের সাথেই অবস্থিত হাতেম আলী গংদের ৬/৭ বিঘা জলাকারের একটি পুকুর আড়াই লক্ষ টাকায় ইজারা নিয়ে সেখানে বালু রাখছেন।
কপোতাক্ষ নদ খননের কাজ পাওয়া ঠিকাদার শহীদ বলেন, আনঅফিসিয়াল ভাবে আমরা করতেছি। তা না হলে আমার বিল কম হবে, নদী খনন হবে না। নদের থেকে শ্যালো মেশিন দ্বারা বালি উত্তোলনের বিষয় পানি উন্নয়ন বোর্ড বা উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তাদের কাছে গিছি তারা বলেছে আমরা তো অনুমদন দিতে পারি না। তাই আমরা আনঅফিসিয়াল ভাবে করছি। তখন তার নিকট আনঅফিসিয়াল শ্যালো মেশিন বসিয়ে নদ থেকে বালি কাটা বৈধ না অবৈধ জানতে চাওয়া হলে তিনি বলে অবৈধ। তিনি জানেন আনঅফিসিয়াল ভাবে শ্যালো মেশিন বসিয়ে নদ থেকে বালি কাটা অবৈধ তবুও সে কাজই চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় ট্রলি চালক সোহাগ বললেন, প্রতি ট্রলি বালুর জন্য জামাল মেম্বার মোট নেন ৬৫০টাকার, যার মধ্যে সে রাখে ৩৫০টাকা আর আমাদের ট্রলি ভাড়া দেয় ৩০০ টাকা। করে নিচ্ছে। হাড়িয়াদেয়াড়া গ্রামের নুরুর ছেলে রহমান, সোহান, মিশ্রীদেয়াড়ার সাহেব আলী, আল আমিন, আঙ্গারপাড়ার পিন্টু, মুন্নার মাধ্যমে জামাল মেম্বার গত ৩/৪ বছর ধরে এই অবৈধ বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
মাগুরা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জামাল হোসেন বলেন, আমি ঠিকাদারকে ৫ হাজার টাকা দিন চুক্তিতে ৪টি শ্যালো মেশিন ভাড়া দিয়েছি। ঠিকাদার (শহীদ) নিজেই বালু তুলছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেলো ভিন্ন তথ্য। মিশ্রী দেয়াড়া বাজার জামে মসজিদের সামনের মাঠে জামাল মেম্বার নিজে বালু উত্তোলন করে রেখেছেন। প্রতিবেদক সেখানে থাকাকালীন ট্রলি বোঝাই করে বালু নিয়ে যেতে দেখা গেলো। জামাল মেম্বার প্রতিবেদককে জানালেন ৩০০ টাকা ট্রলি ভাড়া করে পাশের একটি মসজিদে ফ্রী বালু দেওয়া হচ্ছে। বালু কোথায় যাচ্ছে খুঁজতে খুঁজতে সেই বালু পাওয়া গেল হাড়িয়াদেয়াড়া গ্রামের রিপনের বাড়িতে।
অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী বাপা’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিদুল হক খান বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তলদেশে যে শুন্যতার সৃষ্টি হয় তাতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিধ্বস হওয়ার আশংকা আছে। এবং পাশের কয়েকটি গ্রামের মাটি ধ্বসে সেই শুন্যতা পুরন হবে। ফলে গ্রামের পর গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীদেরকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুল হক বলেন, ইতিমধ্যে আমরা এই বালু উত্তোলকদের বিরুদ্ধে কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি কিন্তু অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না। এখন আমরা সরাসরি মামলার আশ্রয় নেবো এবং বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার বিষয় আমি অবগতি না। যেহেতু আপনি জানালেন সেহেতু আমি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *