LOADING

Type to search

মণিরামপুরে চান্দুয়া -সমসকাঠি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রতি শিক্ষার্থীর পিছনে সরকারের বছরে ব্যয় ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৮৮০ টাকা

যশোর

মণিরামপুরে চান্দুয়া -সমসকাঠি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রতি শিক্ষার্থীর পিছনে সরকারের বছরে ব্যয় ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৮৮০ টাকা

Share

জি, এম ফারুক আলম, মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি :
একজন শিক্ষার্থীকে জেএসসি পাশ করাতে বেতন হিসেবে শিক্ষকরা সরকারি অর্থ গ্রহণ করেছেন ৫ লক্ষাধিক টাকা। বিষয়টি অবিশ্বস্য মনে হলেও বাস্তবে ভিন্নতা নেই কোন। বিদ্যালয়ের ১৪ জন শিক্ষক কর্মচারী বেতন হিসেবে বার্ষিক সরকারি অর্থ গ্রহণ করছেন ২৯ লক্ষ ১৫ হাজার ২৮০ টাকা। যা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসিক বেতন সিটে উত্তোলন হচ্ছে ২ লক্ষ ৪২ হাজার ৯৪০ টাকা। যা জেএসসিতে ১জন শিক্ষার্থীকে পাশ করাতে শিক্ষক কর্মচারীদের পিছনে বেতন হিসেবে সরকারকে ব্যয় করতে হয়েছে ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৮৮০ টাকা। প্রতি মাসে ১৪ জন শিক্ষক কর্মচারী বিপুল অংকের এ টাকা গ্রহণ করা হলেও গত বছর জেএসসিতে পাশ করেন মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া ২০১৮ সালে মাত্র ৪ জন, ২০১৬ সালে ৫ জন এবং ২০১৫ সালে ১০ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। যা রীতিমত অবাক করার বিষয় হলেও এটাই বস্তবতা। এলাকাবাসী বলছেন ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হলেও শিক্ষার মানের দিক দিয়ে কোন উন্নতি হয়নি। এলাকাবাসীর কেউ কেউ মন্তব্য করে বলেন, এটি বিদ্যালয় নয়, একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রুপ নিয়েছে। যা দেখারও কেউ বলে মনে করেন তারা।
প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইন সহকারী শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক, সহকারী শিক্ষক শফিকুর রহমান (ইসলাম ধর্ম), সহকারী শিক্ষক শামীমা খাতুন, সহকারী শিক্ষক স্বপন কুমার মন্ডল (হিন্দু ধর্ম), প্রবীর সরকার (কৃষি বিজ্ঞান), সহকারী শিক্ষক শিমুল মন্ডল (গণিত), সহকারী শিক্ষক মোজাম্মেল হক, সহকারী শিক্ষক ডলি খাতুন, সহকারী শিক্ষক প্রদীপ দে (ব্যবসায় শিক্ষা), সহকারী শিক্ষক কামন প্রতাপ মন্ডল (কম্পিউটার), অফিস সহকারী শাহরিয়ার হোসেন ও ২ জন কর্মচারীসহ ১৪ জন প্রতি মাসে কেবল বেতনই নিচ্ছেন। আলোচিত এ বিদ্যালয়টি যশোরের মণিরামপুর উপজেলাধীন চান্দুয়া সমসকাটি নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার এমন দশা হলেও সরকারি অর্থ গ্রহণ করতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ৮ জন শিক্ষক বেতন গ্রহণ করার বিধান থাকলেও এ বিদ্যালয়টিতে রয়েছে তার ভিন্নতা। কিভাবে বিধি বর্হিভূতভাবে এতো সংখ্যক শিক্ষক বেতন নিচ্ছেন তা কেবল বলতে পারবেন সরকারের সংশি¬ষ্ট দপ্তরের কর্তা ব্যক্তিরা। এছাড়াও বিদ্যালয়টি মাধ্যমিকে উন্নিত করতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ইতো মধ্যে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার অনুমোতিও পেয়েছেন বলে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বিপদ ভঞ্জন পাড়ে জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৪ জুন) সরেজমিন চান্দুয়া সমসকাটিতে অনুসন্ধানে গেলে জানাযায়, বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত এবার শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ৩৫ জন। ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী শিমলা, পিংকি এবং হুমায়রার সাথে কথা বলে জানাযায়, স্কুলে মেয়েদের চেয়ে স্যারেদের সংখ্যা বেশি। এক পর্যায় শিক্ষার্থী হুমায়রা জানায়, তার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে এবার শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩ জন। ৭ম শ্রেণির সামিরা জানিয়ে তার শ্রেণিতে মাত্র ১০ জন। ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়াম, কুলছুম খাতুন জানায়, এবছর তাদের শ্রেণিতে শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ১২জন। ৩ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ৩৫ জন থাকলেও নিয়মিত উপস্থিত থাকেন ২০ থেকে ২৫ জন বলে তারা দাবী করেন।
কেবল ১৪ জনই শিক্ষক কর্মচারী নন এ বিদ্যালয়টিতে। খোঁজ নিয়ে জানায়ায়, বিদ্যালয়টিতে নবম-দশম শ্রেণির জন্য আরো কয়েকজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিপুল অংকের টাকা নিয়ে নিয়োগ দেওয়া এসব শিক্ষকদের বেতন কবে হবে সে অনিশ্চিত বিষয় নিয়ে দিন কাটছে তাদের। সালমা খাতুন নামের এক শিক্ষিকাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৮ লক্ষ টাকা নিয়ে। সম্প্রতি সালমা খাতুনের সাথে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরোধ হওয়ায় সালমা নামের ওই শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বলেও জানা গেছে। শিক্ষিকা সালমার স্বামী মাহবুবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আংশিক সত্যতা স্বীকার করেছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইন এলাকাবাসীর কাছে একজন জাদুকর হিসেবে পরিচিত। নীতিমালা উপেক্ষা করে জুনিয়র স্কুলে এতো সংখ্যক শিক্ষক কর্মচারীর বেতন করানো নিয়েই শিক্ষক মহলে আলোচনায় উঠে আসে সে। অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয়টিতে কাম্য শিক্ষার্থী না থাকলেও কিভাবে নীতিমালা বির্হভুত ভাবে বেতন হিসাবে সরকারি অর্থ পাশ করিয়ে আনছেন প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইন ?
বিদ্যালয়ের এসব বিষয়ে মুঠোফোনে প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন জবাব না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ভিত্তিহীন তথ্য নিয়ে অযথা পিছনে লেগেছেন কেন ? বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বিপদ ভঞ্জন পাড়ে জানান, স্কুলের অভ্যন্তরীন বিষয় জানতে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেন।
এব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার জানান, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিধি অনুযায়ী ৮ জন শিক্ষক বেতন ভোগ করতে পারবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ২০১৮ সালে সর্বশেষ মন্ত্রনালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের আরো কিছু পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে এ পদগুলিতে অনেকেই নিয়োগ দিলেও মন্ত্রনালয় থেকে এখনো বেতন ভাতার জন্য অর্থ ছাড় করেননি। চান্দুয়া সমসকাটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৪ জন কিভাবে বেতন ভোগ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো বা সেকশন দেখানো হয়েছে। তবে সেটি করতে কাম্য শিক্ষার্থী অবশ্যই থাকতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *